
আলোর দিশারী
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “সভ্যতার সংকট” প্রবন্ধে লিখেছিলেন “আজ ও আশা করে আছি পরিএাণ কর্তা আসবে সভ্যতার দৈববাণী নিয়ে, চরম আশ্বাসের কথা শোনাবে পূর্ব দিগন্ত থেকেই”। বাঙালির জীবনে ও এই রকম একজন এানকর্তা হয়ে এসেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পরে ও শোষন আর বঞ্চনার থেকে রেহাই মেলেনি বাঙালিদের। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্ম নেওয়ার পরে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী চতুরতার সাথে বাঙালির কাছের থেকে তার মায়ের ভাষার হরণ করতে চেয়েছিল। পশ্চিমপাকিস্তানিরা চেয়েছিল তাদের উর্দু ভাষাকে বাঙালির রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে বাঙালির একজন এাণকর্তা ছিল। সেই এাণকর্তাই এই অপতৎপরতা বিরুদ্ধে সিংহের মতো গর্জে উঠেছিলেন। আজীবন ভালোবেসেছিলেন তার এই মায়ের ভাষাকে। তাই যখনই দেখেছিলেন পাকিস্তানিদের নোংরা মানসিকতার বলি হতে যাচ্ছিল তার মায়ের ভাষা তখনই বজ্রেরসহিত কম্পিত হয়েছিলেন এই মহান নেতা। আর তার সিংহ গর্জনে গর্জিত হয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা।আর তা দেখেই ভয়ে ভীত হয়ে কাপুরুষের মতো বাঙালির এাণকর্তা বঙ্গবন্ধু কে রাতের আধারে গ্রেফতার করেছিল পাক হানাদার বাহিনী কিন্তু তাকে গ্রেফতার করে ও বাংলার এই গন ছাএ আন্দোলন থামাতে পারে নি। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে রাজপথ করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা কম্পিত। আর সেই কম্পনের ভীতে ভীত হইয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। কাপুরুষের মতো রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে গুলিবর্ষন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজপথ কম্পিত বাঙালি দামাল ছেলেদের উপর। সেই গুলিবর্ষনে শহীদ হয়েছিলদেন রফিক , শফিক, বরকত আর জব্বার সহ নাম না জানা অনেক বীর বাঙালি। এর ফলে চাপ তৈরী হয়েছিল নানান মহল থেকে। দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বাইরের দেশে ও আলোচনা হয়েছিল এই মহান আন্দোলিত প্রেক্ষাপট। কারন ভাষার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে সেই ভাষা অর্জন করার গৌরব একমাএ বাঙালিজাতির। আর সেই সংগ্রামের কাণ্ডারি ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাঙালির এাণকর্তা ও সেই সময়ের মহান ছাএ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অবশেষে ক্রমবর্ধমান গনআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গনপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রনীত হয়েছিল। আর এই প্রনয়নের মধ্য দিয়েই বাঙলি পেয়েছিল তার প্রথম অধরা মুক্তি। আর পুরো বিশ্ব দেখেছিল এক মহান নেতাকে যার একক নেতৃত্বতে অর্জিত হয়েছিল বাঙালির প্রথম ভাষা আন্দোলনের বিজয়। বঙ্গবন্ধু তার বায়োগ্রাফি তে বলেছিলেন :
“We decided in the meeting in my room to observe 21 February as state Language Day and to form a committee that day to conduct the movement to establish Bengali as the State Language.”
এইবার আপনিই ভাবুন একজন ব্যক্তি যার পুরো জীবন ও যৈবন শুধু মাএ কারাভোগ আর লড়াই করে যেতে হয়েছিল মুক্তির জন্য। আর সেই মুক্তি কখনো তার একক মুক্তি ছিল না। ছিল পুরো বাঙালি জাতির অধিকারের মুক্তি। আর এই লড়াইয়ের প্রথম সংগ্রামটাই ছিল ভাষার সংগ্রাম। মায়ের ভাষা রক্ষা করার সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামের একক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই সময়ের ব্জ্রকন্ঠী ছাএনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কন্ঠিতবোধ করে নি সেই সময়ে জেলে যেতে ও। আর তার দীপ্তকন্ঠের কন্ঠিত ভাষনে উজ্জীবিত হয়ে মায়ের ভাষার লড়াইয়ে নেমে অর্জন ছিনিয়ে এনেছিল সাহসী দামাল বীর বাঙালি ছেলে মেয়েরা। তাই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল এক কথায় অনবদ্য। প্রত্যক্ষ ভাবে উপস্থিত না থেকে ও যেইভাবে সেইসমইয়ে মায়ের ভাষা প্রেমী তরুন দের সাহস জুগিয়েছিলেন তা ছিল প্রশংসনীয়। ইতিহাস কখনো মুছা যায় না। ধরা হয় সেই সময় থেকেই বাঙালি তার স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য নিজেদের তৈরি করেছিল আর অনুপ্রেরনায় ছিল বাঙালি জাতির সূর্য মুক্তির দিশারি স্বাধীনতার প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমান।
অবশেষে বলবো ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অত্যন্ত বিরাট, বলা যেতে পারে এটি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল অবধি বিস্তিত। আর সেই জায়গায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্র এর অতন্দ্র প্রহরী তিনি ছিলেন জনগনের পক্ষে। স্বাধীনতা মত প্রকাশের পক্ষে। শোষন ও বঞ্চনার বিপক্ষে। গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ , শোষন মুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষাই ছিল তার সংগ্রামী জীবনের মূল কথা। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৫৪ এর নির্বাচন, ৫৮ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভুথান, ৭০ এর নির্বাচন ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান তার গণতান্ত্রিক চেতনা , শোষন মুক্তির উদগ্র বাসনাকেই আমাদের সামনে তুলে ধরে। তিনি তার ব্যক্তিসওাকে বাঙালি জাতিসওয়ায় রুপান্তরিত করেছিলেন।
তাই অন্নদা শঙকর রায় তো বলেই গেছেন-
“যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান”।।