
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন জঙ্গিদের সব থেকে বড় গডফাদার,,বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জঙ্গিরা ফুলেফেঁপে ওঠে. বাংলাদেশে খালেদা সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে জঙ্গিবাদের সূচনা হয়। জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে মদদ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হয়েছিলো গণতন্ত্রের লেবাসে। এই দলের নাম বিএনপি। আসলে তারা ছিল জঙ্গিবাদের গডফাদার। তাদের কারণেই অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ডালপালা ডানা মেলেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন জঙ্গিদের সব থেকে বড় গডফাদার। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে উপড়ে ফেলেছিলেন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে শুরু করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এখান থেকেই বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের উত্থান পর্বের শুরু। খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের আরেক গডমাদার।
তিনি জঙ্গিদের লালন করেছিলেন তার রাজনৈতিক মসনদ পাকাপোক্ত করার জন্য। বিভিন্ন জঙ্গিসংগঠনের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক গড়েছিলেন এবং ২০০১ সালের আগে এসেই তাদের এই পারস্পারিক সম্পর্ক প্রকাশ হয়ে যায়। একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির ছিলো প্রকাশ্য সম্পর্ক। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২০ ট্রাক অস্ত্র আসা বা একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা- সবই জঙ্গি যোগসাজশে হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং বাংলাদেশে মূলধারার রাজনীতিতে জঙ্গিবাদকে ঠাঁই দেয়ার মূল কাজটি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তথ্যসূত্র বলছে, এরশাদ আমলে জন্ম নেয়া হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) নামের জঙ্গি সংগঠনটি বিএনপি শাসনামলে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম আমলে সংগঠনটির উত্থান ও বিস্তার ঘটে। এই সংগঠনটি যশোরের উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলের কাছে ও হেলিপ্যাডে বোমা পেতে রাখা, রমনার বটমূলে হামলা, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে গির্জায় হামলা ও নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলাসহ একাধিক জঙ্গি হামলা চালায়। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জঙ্গিরা ফুলেফেঁপে ওঠে। একের পর এক জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ঘটতে থাকে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যা, বৃটিশ হাইকমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান এবং ৬৩ জেলায় বোমা হামলা বহুল আলোচিত কয়েকটি ঘটনা। গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মুফতি হান্নানসহ একাধিক জঙ্গি নেতা জবানবন্দিতে বলেছেন- বেগম জিয়ার পুত্র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরসহ বিএনপি-জামাতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে সাথে বৈঠক করে ২১ আগস্টের হামলার পরিকল্পনা করা হয়। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি মতে, এই হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তারেক রহমান ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং এই হামলার গ্রেনেড এসেছিলো পাকিস্তান থেকে। ২০০২ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানে যান জেএমবি নেতা শায়খ রহমান। দেশে ফিরে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়বার সহায়তায় জেএমবিকে সংগঠিত করেন তিনি। জেএমবি ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে ২৬টি হামলা চালায়। জঙ্গি নেতা শায়েখ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাইয়ের উত্থান ঘটে। রাজশাহীর বাঘমারা, নওগাঁর রানীনগর-আত্রাই এলাকায় নিজেদের রাজত্ব কায়েম করে জেএমবি। আত্রাইয়ে মানুষ মেরে গাছে পা ঝুলিয়ে রাখে। তখন বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাভাই হচ্ছে মিডিয়ার সৃষ্টি।
অথচ এই বিএনপির মায়ের পেটের ভাইয়ের ভূমিকায় ছিলো এই বাংলাভাই তথা জেএমবি। অনেকেই মনে করেন, বিএনপির সাথে আইএসআইয়ের সংযোগ আর বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও তার গর্ভে জন্ম নেওয়া জঙ্গি তৎপরতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বারবার সামনে চলে আসে পাকিস্তান, জামাত, শিবির ও বিএনপির নাম। স্বাধীন বাংলাদেশে জেনারেল জিয়া ও বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য খুনিরা উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিলেন আর জামায়াতের পরিচর্যায় খালেদা-তারেক জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ দানবকে আশ্রয় দিয়ে, অক্সিজেন দিয়ে শক্তিশালী করে তুলেছেন। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা, ময়মনসিংহে ফাইলা পাগলার মাজার ও ময়মনসিংহের ৩টি সিনেমা হলে বোমা হামলা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানে ১৭ আগস্টের পর অসংখ্য আত্মঘাতী হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন, আহত হন ৪ শতাধিক।
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা করে জঙ্গিরা।বিএনপি-জামাত জোট আমলে জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ প্রায় শতাধিক জঙ্গি সংগঠনের উত্থান ঘটে। সে সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাতের সহায়তায় পুরিপুষ্ঠ হয়ে ওঠে এসব জঙ্গি সংগঠন। পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদকে কঠোরহস্তে দমন করে। আওয়ামী সরকারের হাত ধরেই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।